০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ছাত্ররাজনীতি কার স্বার্থে?

-

ছাত্ররাজনীতি আজ আমাদের দেশের মানুষের কাছে একটি আতঙ্কের নাম। দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ আজ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ছাত্র রাজনীতির কুফল ভোগ করছে। অথচ বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুথান, স্বাধীনতা আন্দোলন, ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররাজনীতির গৌরবময় ইতিহাস, দেশ-জাতির প্রয়োজনে ছাত্রদের আপসহীন ভুমিকা ছিলো।

কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নানান কারণে ছাত্ররাজনীতির গুণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। ছাত্ররাজনীতি তার স্বকীয়তা ধরে রাখার পরিবর্তে দলীয় লেজুড়বৃত্তি, অস্ত্রবাজি, টেন্ডারবাজি সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এ সুযোগে দলীয় নেতারা ছাত্রদের দিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কাজগুলো করিয়ে নেয়া শুরু করে। দলীয় পেশীশক্তির প্রয়োজনে রাজনীতিবিদরা অন্ধের মতো সকল অপরাধকে বৈধতা দিয়েছেন।

মূল রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্য পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের ফলে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত কেউ কেউ হয়ে উঠছে বেপরোয়া, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ধর্ষণকারী ও মাদকাসক্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিরাজ করছে অস্থিরতা, ঘটছে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি, ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। অভিভাবকেরা সন্তানকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না।

ছাত্ররা রাজনীতির নামে মাঠপর্যায়ে প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ছাত্ররাজনীতির এই ধারায় কিন্তু আমরা খুব একটা আদর্শ কিংবা নৈতিকতার অনুশীলন কিংবা চেষ্টা, কিছুই দেখছি না। সেই অর্থে চলমান ছাত্ররাজনীতির কোনো ন্যূনতম মানও দেখা যাচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো-মন্দ ও শিক্ষা-গবেষণার প্রশ্নে এদের কোনো কর্মসূচি নেই। এমনকি সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধার প্রশ্নেও তাদের কোনো নৈতিক অবস্থান নেই। উল্টো আমরা বিভিন্ন সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বিরুদ্ধে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের অবস্থান নিতে দেখেছি।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা যখন চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছিল, রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল, তখন এই ছাত্র রাজনীতির হোমরাচোমরারা তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীনদের পেটোয়া বাহিনী, হেলমেট বাহিনী হয়ে কাজ করেছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে যখন স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা রাজপথে আন্দোলন করছিল, তখনো আন্দোলনে নামা কিশোর-কিশোরীদের বিরুদ্ধে এদের মারমুখী হতে দেখা গেছে। এই চর্চাটা অনেক দিন ধরেই চলছে। এখনকার ক্ষমতাসীনদের সময়ে যেমন এটা দেখা যাচ্ছে, তেমনি এর আগে ক্ষমতায় থাকা দলের পক্ষেও ছাত্ররাজনীতির এই ভূমিকা আমরা দেখেছি।

ছাত্র সংগঠনগুলোতে পদ নিয়ে যে মারামারি এটা কি ছাত্র রাজনীতি? এমন না যে ছাত্রদের কোন স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এই পদ নিয়ে মারামারি হচ্ছে। ছাত্রদের অধিকার, ছাত্রদের ভালো থাকা- এটিই ছাত্র রাজনীতির সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ লক্ষ্য হওয়ার কথা । সেখানে আমরা দেখছি উল্টোটা। ছাত্ররাজনীতির মৌলিক ভিত্তি হওয়া উচিত ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব। কাউন্সিল থাকবে, তাদের ভোটাভুটিতেই নেতৃত্ব বাছাই
হবে। অথচ তা না হয়ে তার থেকে বেশি হচ্ছে সিন্ডিকেট, পদ বেচাকেনা। আর যে কারণে বাইরের প্রভাবকগুলো মেধাবী ছাত্রদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করছে।

ছাত্ররাজনীতি হতে হবে পুরোপুরি শিক্ষা ব্যবস্থাকেন্দ্রিক, শিক্ষার্থীদের অধিকার, শিক্ষা-গবেষণা সংক্রান্ত দাবিদাওয়া, ক্যাম্পাসের পরিবেশ-সংস্কৃতি ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে। ক্ষমতায় বা ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি ছাত্ররা করবে না। ছাত্র সংগঠনগুলোকে কাঠামোগতভাবে এবং অনুশীলনের জায়গা থেকে স্বাধীন থাকতে দিতে হবে। তাহলেই আজকের তরুণ প্রজন্ম নিজেদের মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও তখন ছাত্ররাজনীতি ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে।


আরো সংবাদ



premium cement
সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলছে বাংলাদেশ : গয়েশ্বর একটি গাছ কাটার বদলে ২০টি গাছ লাগাবে বিআইডব্লিউটিএ বিশেষ ব্যবস্থায় পাসপোর্ট বিতরণ করবে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস বানিয়াচংয়ে টমটমের সিরিয়াল নিয়ে টেটাযুদ্ধ : নিহত ৩, আহত অর্ধশতাধিক ৩৮ দিনে বজ্রপাতে ৩৫ কৃষকসহ ৭৪ জনের মৃত্যু দেশে অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপনের মহোৎসব চলছে : টিআইবি সন্তোষজনক ভোটার উপস্থিতিতে স্থানীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে : হাছান মাহমুদ বগুড়ায় ছটফট করতে করতে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু ঝালকাঠিতে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষক গ্রেফতার ৪৬তম বিসিএস প্রিলির ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১০৬৩৮ কুয়াকাটায় গলায় ফাঁস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

সকল